ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫ , ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
শোক সংবাদ ৫ বছর সরকারকে ক্ষমতায় রাখার বিষয়টি জনগণ বলছে -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আনন্দ-গান-শোভাযাত্রায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন ভারত নেপাল ও ভুটান থেকে কিছু পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা রেলে ইঞ্জিন-কোচ সংকটে বন্ধ রয়েছে ৭৯টি ট্রেন ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ২ পার্বত্য চট্টগ্রামে পানির তীব্র সংকট পাহাড়ে জনজীবন বিপর্যয় প্লট দুর্নীতিতে শেখ হাসিনা-জয়সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা রাষ্ট্র সংস্কারে জাতীয় সনদ শিগগিরই -আলী রীয়াজ আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি’র বৈঠক সয়াবিন তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক-জামায়াত সীমান্তে ২৩ লাখ টাকার হিরার নাকফুল ফেলে পলায়ন বেতন-বোনাস না দিয়ে কারখানা বন্ধ, শ্রমিকদের বিক্ষোভ সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে ক্লাস বর্জন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে- পরিবেশ উপদেষ্টা ১১৭ বার পেছালো সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবি দুই সপ্তাহের মধ্যে চালের দাম আরও সহনীয় পর্যায়ে আসবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা বরিশালে আদালতে মামলা জট
# সিলেটে সব উপজেলা প্লাবিত, পানিবন্দি সাড়ে ৮ লাখ মানুষ # সাধারণ মানুষের জন্য খোলা হয়েছে ৬৫৬ আশ্রয়কেন্দ্র # বন্যায় সিলেটে কোরবানি হয়নি ৫ সহস্রাধিক পশু # সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে সেনা মোতায়েন # সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবছে নতুন নতুন এলাকা # বিপদসীমার ওপরে তিস্তার পানি, ডুবেছে নিম্নাঞ্চল

উজানের ঢল ও টানা বর্ষণে বন্যার কবলে বাংলাদেশ

  • আপলোড সময় : ১৯-০৬-২০২৪ ০৯:২৮:৫৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২০-০৬-২০২৪ ১২:০৬:২১ পূর্বাহ্ন
উজানের ঢল ও টানা বর্ষণে বন্যার কবলে বাংলাদেশ সিলেটের নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চারদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকার কারণে বুধবার জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। সিলেট মহানগরীকে দুইভাগে বিভক্ত করা সুরমা নদীর পানিতে তীরবর্তী ওয়ার্ডগুলোর বাসা-বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্যার্তদের। ছবিটি গতকাল বুধবার তোলা
উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ পাঁচ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এসব এলাকায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। উজানের ঢলের পানিতে ডুবছে শহর ও লোকালয়। গতকাল বুধবার সকালের ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হু হু করে বাড়ছে নদী ও হাওরের পানি। অপরদিকে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার ও তিস্তা নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টির পানিতে নদ-নদী তীরবর্তী চর, দ্বীপচর ও নিম্নাঞ্চলগুলো তলিয়ে গেছে। এতে বন্যার আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটছে তীরবর্তী মানুষের। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, উজানের ঢল ও টানা বর্ষণে বন্যার মুখোমুখি বাংলাদেশ। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কুড়িগ্রামে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে। এছাড়াও আগামী আরো ছয় দিন ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় ও আসাম থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেটের নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সিলেটে আগামী ৬ দিন ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট জেলার সবকটি উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা, কুশিয়ারা, গোয়াইন, সারি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে সুরমার সিলেট পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার অমলশীদ পয়েন্টে ৫৬ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯৯ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার, গোয়াইন নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া কুশিয়ারার শেওলা পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি বাড়ায় সিলেট শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত ২২ নম্বর ওয়ার্ডের উপশহরের সবকটি ব্লকে সড়ক ডুবে গেছে, বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়া নগরের ১০, ১৪, ১৫, ২৫, ২৬, ২৭, ৩৮, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরের তালতলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা কর্মচারির ছুটি বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। বরইকান্দিতে অবস্থিত বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পানি ঢোকার উপক্রম হলে সিটি করপোরেশনের অনুরোধে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। নদীর তীরে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ সৃষ্টি করে উপকেন্দ্রটির সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্যায় ঝুঁকিতে পড়েছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকার বিদ্যুতের সাবস্টেশন। সুরমা নদী ছাপিয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এটি প্লাবিত হলে দক্ষিণ সুরমার প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়তে পারেন। গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। তাদের সহায়তা করছে সিলেট সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগ। নদীর পাড়ে বালির বস্তা ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন তারা।
সূত্র জানায়, সিলেট মহানগরের সব নিচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। এছাড়া যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা বন্যাকবলিত। এছাড়া মহানগরের মধ্যে অনেক প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি রয়েছে। এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-তামাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান পানির নিচে। সিলেট মহানগর পুরোটা না হলেও জেলার সব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাটসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই গত শনিবার ফের বন্যার কবলে সিলেট। গত সোমবার ঈদের দিন ভোর রাত থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারি বর্ষণ। সাথে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় সিলেট মহানগরের অনেক এলাকা। সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থানেও অবনতি হয় বন্যা পরিস্থিতির। গত সোমবার বিকেলে বৃষ্টি থামলে ধীরে ধীরে কিছুটা পানি কমে যায়। কিন্তু গত মঙ্গলবার ভোররাত থেকে ফের শুরু হয় বৃষ্টি। উজানেও বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। ফলে হু হু করে বাড়তে থাকে সিলেটের সব নদ-নদীর পানি। ঈদের দিন দুটি নদীর পানি ২টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে থাকলেও গত মঙ্গলবার সকালে ৪টি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকাল বুধবার বিকেলে সিলেট জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন জায়গায় পানি আরও বেড়েছে।
সিলেটের সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি বইছে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। আর সারি-গোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ০.২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেটজুড়ে ৮৬৪টি গ্রাম ও এলাকা প্লাবিত। এসব গ্রাম ও এলাকার ৩ লাখ ৭১ হাজার ৫০৭ জন বন্যা আক্রান্ত। এরমধ্যে সিলেট মহানগরের ৪টি ওয়ার্ডের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। সিলেট জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ৮০টি।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পানিবন্দি লোকদের উদ্ধারের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ডেডিকেটেড অফিসার নিয়োগের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আগামী ৩ দিন সিলেট অঞ্চলে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ সময় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বইছে বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বইছে বিপদসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এদিকে টানা বৃষ্টি আর ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা উজানের পানিতে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। একই সঙ্গে নদ-নদীর পানিও বিপদসীমার ওপর দিয়ে অতিক্রম করছে। বন্যার কারণে এবার সিলেটে এবার ৫ সহস্রাধিক পশু কোরবানি হয়নি। পশু কিনে বন্যার কারণে কোরবানি না দিতে পারায় অনেকেই মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করেছেন। আবার অনেকেই কোরবানি না দিয়ে পশু নিয়ে উঠেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। এবারের বন্যায় সিলেট নগর ও সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাটসহ আরও কয়েক উপজেলার মানুষ পশু ক্রয় করেও কোরবানি দিতে পারেননি।
সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিজানুর রহমান মিয়া জানান, এবারের ঈদে সিলেটে ১ লাখ ৮০ হাজার গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ কোরবানির জন্য প্রস্তুত ছিল। কোরবানি হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯০৬টি। বন্যার কারণে অনেকেই কোরবানি দিতে পারেননি বলে জানান তিনি। এবার কতজন কোরবানি দিয়েছেন এবং অন্যরা কী কারণে কোরবানি দিতে পারেননি এ বিষয়ে তিনি বলেন, সে হিসেব আমাদের কাছে এখন নেই। গতবার ১ লাখ ৫০ হাজার পশু কোরবানি হলেও এবার হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার। অপরদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জে দেখা দিয়েছে বন্যা। আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। পানি বাড়তে থাকায় ডুবছে নতুন নতুন এলাকা। এতে জনদুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমার পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে টানা বৃষ্টিপাতে বন্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত পানি বাড়ছে। আবার এক জায়গার পানি নেমে গিয়ে অন্য জায়গা প্লাবিত হচ্ছে। বর্তমানে জেলার কোনো হাওর কিংবা নদীর আর ধারণ ক্ষমতা নেই। এ অবস্থায় পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সুনামগঞ্জ শহর ছাড়াও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সদর উপজেলা, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, শান্তিগঞ্জ ধর্মপাশা ও মধ্যনগর। এসব এলাকার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। সিলেট সিটি করপোরেশনে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, সিলেট নগরে বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় সিটি করপোরেশনের সেচ্ছাসেবক টিম কাজ করছে। সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসেন জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১০৭.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৬টি ইউনিয়নের ১,৫৪৮ গ্রাম, একটি পৌরসভা, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টি এরইমধ্যে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানান, বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় পানিবন্দি লোকদের উদ্ধারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়গুলোতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ডেডিকেটেড অফিসার নিয়োগ ও ইউনিয়নগুলোতে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, জেলার নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাটে ভারি বৃষ্টিপাতে স্থানীয় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। ক্ষতি হয়েছে ফসলি ক্ষেত ও পুকুরের। মাছ চাষিরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পানি ছিল না। মাছ চাষে বিলম্ব হয়েছে। পোনা উৎপাদন ও পুকুরে পোনা ছেড়ে দিতে না পারায় একটা ক্ষতি হয়েছে। যখন পোনা ছেড়েছে তখনই তলিয়ে গেছে পুকুর।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস সূত্র জানিয়েছে, বৃষ্টিপাতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসা পানিও রয়েছে। পানির চাপ কমাতে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। দোয়ানী তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এর ৭৩ কিলোমিটার ভাটিতে থাকা কাউনিয়া তিস্তা রেলসেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে পানি। গতকাল বুধবার সকাল ৬টায় কাউনিয়া রেলসেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে, সকাল ৯টায় ২০ সেন্টিমিটার ওপরে, দুপুর ১২টায় ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে সকাল ৬টায় বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচে, সকাল ৯টায় ২৩ সেন্টিমিটার নিচে, দুপুর ১২টায় ২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রংপুরের প্রধান আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আগামী পাঁচ দিন বৃষ্টিপাত হতে পারে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে উজানের পানি ও অভ্যন্তরীণ বৃষ্টিপাতের কারণে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামের দুধকুমার, তিস্তা ধরলায় পানি বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। তিস্তার ব্যারাজ পয়েন্টে না বাড়লে কাউনিয়া পয়েন্টে সন্ধ্যার পর পানি নেমে যেতে পারে। জেলা খামারবাড়ির উপ-পরিচালক ড. শাইখুল আরেফিন বলেন, আমাদের কিছু বীজতলা, অল্প কিছু আমন আর ভুট্টা আছে। উপজেলা থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে ব্যবস্থা নেবো। কোন ফসল কতটুকু ক্ষতি হয়েছে তালিকা পেলেই বোঝা যাবে। তবে তেমন ক্ষতি হবে না বলে আশা করছি। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের তালিকা করা হয়নি। উপজেলা কর্মকর্তারা তালিকা করছেন। আগামীকাল বিকালে তালিকা দেয়া সম্ভব হবে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার ও তিস্তা নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টির পানিতে নদ-নদী তীরবর্তী চর, দ্বীপচর ও নিম্নাঞ্চলগুলো তলিয়ে যাচ্ছে। এতে বন্যার আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটছে তীরবর্তী মানুষের। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি, পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি এবং তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্ট ধরলার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজিরপুর উপজেলার ১৫টি পয়েন্ট দেখা দিয়েছে ভাঙন। এতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা সৃষ্টি হতে পারে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স